Monday, September 11, 2023

34>|| কৃষ্ণজন্মাষ্টমী /যোগমায়ার জন্মদিন মা বিন্ধ্যবাসিনী ||

 


        33>|| কৃষ্ণজন্মাষ্টমী /যোগমায়ার জন্মদিন মা বিন্ধ্যবাসিনী  ||


জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী, বিষ্ণুর অবতার কৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি।


জন্মাষ্টমীতে পূজিত হয় কৃষ্ণের বালগোপাল মূর্তি। 

২ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত পালনই করা হয়।

কোথাও দুই দিন কোথাও ৮ দিন পালন করা হয়।


ভাদ্র মাসের  কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে পালিত হয় এই জন্মাষ্টমী ব্রত।


হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে কংসের কারাগারে  শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হয়।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পিতার নাম বসুদেব ও মাতার নাম দেবকী। শ্রীকৃষ্ণ পিতামাতার অষ্টম পুত্র।


ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জীবনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড (গান বা কীর্তন, গীতিনাট্য, নাট্য, যাত্রা ইত্যাদি) এর মাধ্যমে রাসলীলা, কংস বধ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড উপস্থাপন করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, মণিপুর ইত্যাদি স্থানে এই অনুষ্ঠান অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে করা হয়। রাস লীলায় কৃষ্ণের ছোট বয়সের কর্ম-কাণ্ড দেখানো হয়, অন্যদিকে, দহি হাণ্ডি প্রথায় কৃষ্ণের দুষ্টু স্বভাব প্রতিফলিত করা হয় যেখানে কয়েকজন শিশু মিলে উচ্চস্থানে বেঁধে রাখা মাখনের হাড়ি ভাঙতে চেষ্টা করে। এই পরম্পরাকে তামিলনাডুতে উরিয়াদি নামে পালন করা হয়। 


কৃষ্ণের জন্ম হাওয়ায় নন্দরাজ সকলকে উপহার বিতরণ করেন এবং সেই কাহিনী উদ্‌যাপন করতে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর পর বহু স্থানে নন্দোৎসব পালন করা হয়।


সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছেন বিষ্ণুর দশম অবতার, শ্রীকৃষ্ণ। 


মথুরায় জন্মের পর শ্রী কৃষ্ণের পিতা 

বসুদেব তাকে রেখে আসেন গোকূলে নন্দরাজের বাড়িতে। সেই থেকেই দিনটি পালন করা হয় জন্মাষ্টমী হিসেবে।


       || যোগমায়ার জন্মদিন ||


 যোগমায়ার জন্মদিন। যোগমায়া, শ্রীকৃষ্ণের বোন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণা অষ্টমীর এক দুর্যোগময় রাতে গোকুলে জন্মেছিল একটি মেয়ে। এই কৃষ্ণা অষ্টমীর  দিনেই।  তার বাবার নাম নন্দ, মা  যশোদা। সদ্যোজাত মেয়েটির মা প্রসব যন্ত্রণায় অচেতন। বাইরে প্রবল দুর্যোগ। আকাশ যেন ভেঙে পড়ছে পৃথিবীর বুকে! 


 তখনও হয়তো  ঠিক মতন শিশুকন্যাটি দেখতে পায়নি মায়ের মুখ।

জন্মের কয়েক মূহুর্ত পরেই চিরকালের জন্য পরিবারহারা হয়েছিল সেই মেয়েটি।

সেই ছোট্ট মেয়েটি যোগমায়া।


ওদিকে ছেলেকে ঝুড়িতে করে মাথায়  নিয়ে প্রবল বৃষ্টির রাতে ভরা যমুনা সাঁতরে পেরিয়ে বাসুদেব এলেন নদীর ওপারে গোপ পল্লীতে। নন্দ গোপের বাড়ি। 


কোন এক অদৃশ্য শক্তিবলে নন্দের গোপ পল্লিতেও  খোলা ছিল দরজা। গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন আরেক সদ্য প্রসূতি, মা যশোদা সহ সকল পরিবার। 

কোলের কাছে ঘুমোচ্ছিল শিশু কন্যা সন্তান। বসুদেব নিজের ছেলেটিকে যশোদার বুকের কাছে শুইয়ে দিয়ে যশোদা শিশুকন্যা টিকে তুলে নিলেন বাসুদেব। 


তারপর আবার সবার অগোচরে দ্রুত নদী পেরিয়ে ফিরে এলেন কংসের কারাগারে। নিরাপদ হল সেই ক্ষুদ্র প্রাণ, ভবিষ্যতে যিনি হবেন মথুরার রাজা শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।দেশজুড়ে পালিত হয় কৃষ্ণের জন্মোত্সব।  


ওদিকে  পরদিন সকালে শিশুরুপি  যোগমায়াকে  দেখেই কংস  সেই সদ্যোজাত মেয়েটির দুই পা ধরে তাকে পাথরে আছাড় মারেন। এমন ই দুরাত্মা কংস। 


যশোদার সন্তান হয়েছিল অপরাহ্নে। তাঁকে জানতেই দেওয়া হয়নি তার সন্তান পুত্র না কন্যা?


পরের দিন জ্ঞান ফিরলে যশোদা পরম আদরে কোলে টেনে নিলেন শিশু কৃষ্ণকে। স্তন্যদুগ্ধে পুষ্ট করলেন তাকে। চোখে হারাতেন তিনি তাঁর কানাইকে। 


নন্দগোপ কিন্তু কোনো প্রকৃত গয়লা ছিলেন না। তিনি বসুদেবের পিতা যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের সন্তান। তাঁকে গয়লা অধ্যুষিত গোকুলের সামন্তরাজা করা হয়। নন্দ তাই গয়লাদের রাজা ।বসুদেবের বৈমাত্রেয় ভাই। ভগবান কৃষ্ণের কাকা। 


দেবকীদেবী কংসের নিজের বোন নন। কংসের পিতা উগ্রসেন যাদবদের নেতৃস্থানীয় ছিলেন। সেই উগ্রসেনের ভাই দেবকের কন্যা দেবকী। 


এবারে আসা যাক ভগবৎ লীলার বাকি অংশে।


কারাগারের দেওয়ালে আছাড় মারতে চেয়ে দুই হাতে মেয়েটিকে তুলে ধরলেন নিষ্ঠুর দুরাত্মা কংস। সজোরে নিক্ষেপ করলেন পাথরে। কিন্তু তাকে মারবে সাধ্য কার! তৎক্ষণাৎ সেই কন্যা কংসের হাত থেকে মুক্ত হয়ে আকাশে উঠলো। আট হাতে ধারণ করল ধনুু, শূল, বাণ, চর্ম, অসি, শঙ্খ, চক্র, গদা! আবির্ভূতা হলেন আদ্যাশক্তি রূপে। কংসের উদ্দেশ্যে ভেসে এল আকাশবাণী- 

"তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে!" 

এরপর‌ যোগমায়া  বিন্ধ্য পর্বতে লোক কল্যাণের জন্য বিন্ধ্যবাসিনী রূপে অধিষ্ঠিতা হন।

জয় শ্রী কৃষ্ণ নারায়ন ।।

জয় মা যোগমায়া কালিকা।

ওঁ তৎসৎ।।

==========================


রাজা নন্দগোপ ছিলেন বসুদেবের পিতা যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের সন্তান। 

তাঁকে গয়লা অধ্যুষিত গোকুলের সামন্তরাজা করা হয়। নন্দ তাই গয়লাদের রাজা ।বসুদেবের বৈমাত্রেয় ভাই। ভগবান কৃষ্ণের কাকা। 


দেবকীদেবী কংসের নিজের বোন ছিলেন না। কংসের পিতা উগ্রসেন ছিলেন যাদবদের নেতৃস্থানীয় । এই উগ্রসেনের ভাই দেবকের কন্যা দেবকী। 

এই দেবকির সাথেই বসুদেবের বিবাহ হয়।

কিন্তু হঠাৎ নিষ্ঠুর দুরাত্মা কংস আকাশ বাণীতে শুনতে পায় যে এই দেবকির গর্ভ জাত সন্তানই তার মৃত্যুদূত রূপে জন্ম নেবে।

এমন ভয়ঙ্কর কথা জানতে পেরেই কংস দেবকি ও তার স্বামী বসুদেবকে কারাগারে নিক্ষেপ করে।

সেই কংসের কারাগারেই দেবকির অষ্টম গর্ভের সন্তান ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয় 

 ভাদ্র মাসের  কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে।

      <------আদ্যনাথ রায় চৌধুরী---->

                06/09/2023

===========================


Thursday, June 29, 2023

32>||চন্দন যাত্রা::--অক্ষয় তৃতীয়াতে::--

   32||>চন্দন যাত্রা::--অক্ষয় তৃতীয়াতে::--

 দীর্ঘ ২১ দিন ধরে  প্রত্যহ পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে চন্দন লেপন করলেন। সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু।

হিন্দু পুরাণ মতে, অক্ষয় তৃতীয়ার (Akshaya Tritiya) দিন সত্যযুগের অবসান ঘটিয়ে ক্রেতা যুগের সুচনা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া হলো চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি, অক্ষয় তৃতীয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি, অক্ষয় শব্দের অর্থ হল যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। উৎকলখণ্ডে বর্ণিত আছে, শ্রীজগন্নাথদেব  মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়াতে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা জগন্নাথের অঙ্গে লেপন করার নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে শুরু হয় চন্দন যাত্রা  উৎসব। গ্রীষ্ম ঋতুতে শ্রীহরির অঙ্গে কর্পূর চন্দন লেপন করলে ভগবান শ্রীহরি প্রীত হন।

দুই বছর পর ভক্তদের উপস্থিতিতে এবার বিখ্যাত চন্দন যাত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পুরীর নরেন্দ্রপুকুর চন্দন যাত্রার জন্য সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। ঐতিহ্য অনুসারে, অক্ষয় তৃতীয়ার অনুষ্ঠান বিশ্ব বিখ্যাত রথযাত্রার রথ নির্মাণের সূচনা করে। চলতি বছরের ১ জুলাই জগন্নাথ রথযাত্রা উৎসব পালন করা হবে।

চন্দ্নযাত্রা

চন্দন যাত্রা চান্দ্র বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে শুরু হয়ে ২১ দিন পর্যন্ত চলে। ভগবান শ্রীজগন্নাথদেব এই দিনে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে চন্দনযাত্রা মহোৎসবটি পালন করার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। ভগবানের অঙ্গলেপন এক ধরণের ভক্তিমূলক কর্ম এবং চন্দন হল সর্বশ্রেষ্ঠ প্রলেপন। যেহেতু ভারতে বৈশাখ মাস অত্যন্ত উষ্ণ থাকে, তাই চন্দনের শীতল গুণ ভগবানের আনন্দ প্রদান করে। জগন্নাথের দুই চক্ষু ব্যতীত সর্বাঙ্গে চন্দন লেপন করা হয়ে থাকে। এবং উৎসব-মূর্তি বা বিগ্রহগণকে নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয় এবং মন্দির পুষ্করিণীতে নৌকাবিহার করা হয়ে থাকে।

শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, বৃন্দাবনে পরম বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে তাঁর আরাধ্য শ্রীগোপাল বলছেন, “আমার শরীরের তাপ জুড়োচ্ছে না। মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তা হলে তাপ জুড়োবে।” তার পর বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পুরীপাদ পূর্বভারতে নীলাচলে জগন্নাথধাম পুরীতে এসে রাজার কাছে পূর্ব স্বপ্নগত সমস্ত কথা বললেন। রাজা গোপালের জন্য এক মণ মলয়জ চন্দন, ২০ তুলা কর্পূর এবং এই চন্দন বহে নিয়ে আসার জন্য দুইজন সেবকের ব্যবস্থা করেদিলেন। মাধবেন্দ্র পুরীপাদ রাজার কাছে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। পথে রেমুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন, গোপাল এসে বলছেন, “হে মাধবেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কর্পূর গ্রহণ করেছি। এখন কর্পূর সহ এই চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন কর। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন। গোপীনাথের অঙ্গে চন্দন লাগালেই আমার অঙ্গ শীতল হবে।” সকালে শ্রীমাধবেন্দ্র পুরিপাদ পূজারীর নিকট রাত্রের স্বপ্নের সমস্ত কথা বলিলেন। পূজারী প্রভু শুনে খুব খুশি হলেন এবং কর্পূর আর চন্দন ঘষে শ্রীগোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে এইভাবে প্রত্যহ পূজারী প্রভু গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে লেপন করলেন। সেইদিন থেকেই চন্দন যাত্রা শুরু হল।

°==================================



30> ||রথের মেলা::-- (61 টি)

 30>|| রথের মেলা::-- (61 টি) 


          || প্রভুর দর্শন ||

                   <---আদ্যনাথ--->

       রথযাত্রায় দিব্য দর্শন,

       যুগের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ।

  প্রভু আজ এলেন ঘরের বাহিরে,

  হাজার হাজার জনমানবের ভিড়ে।

   সুশোভিত রথযাত্রার প্রধান আকর্ষণ,

   জগন্নাথ দেবের মনমুগ্ধকর ভূষণ।

   

  যত দেখি প্রাণের প্রভুরে চোখ সরেনা,

  আরও কাছে পেতে চাই মন ভরেনা।

  প্রভু তিনজনে বসেন সদা হৃদকমলে,

  রথযাত্রায় প্রভুর দর্শনে মুগ্ধ সকলে।


  মানবের উদ্ধার কল্পে প্রভু সচেতন,

 কলিযুগে রথযাত্রায় প্রভুর আকর্ষণ।

 জাতিধর্ম নির্বিশেষে দিতে সহজ দর্শন,

 প্রভুর অশেষকৃপা রথযাত্রায় নগরভ্রমণ।

        <----আদ্যনাথ রায় চৌধুরী---->

           --------------------------------------

আজ এক মহান উৎসব রথযাত্রা উৎসব।

 এই রথযাত্রা উপলক্ষে সারা পশ্চিমবঙ্গ তথা সমগ্র ভারত জুড়ে চলে উৎসব এবং  মেলা। 

কলকাতার ইসকন থেকে শুরু করে মাহেশ, রথতলার মতো একাধিক জায়গায় রথযাত্রাও মেলার জন্য ভক্তদের  ভিড় ঢল নামে।

 শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের মনেই আনন্দের স্রোত বয়ে চলে।

ওড়িশা পুরী বাদেও পশ্চিমবঙ্গের নানান স্থানে হয় রথযাত্রা উৎসব ও মেলা। 

পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে কয়েকটি বিখ্যাত রথযাত্রা। যাতে অংশ নেন হাজার হাজার ভক্ত।

এখানে  কলকাতার আশেপাশের কয়েকটি মেলার সংক্ষিপ্ত কিছু লিখলাম।

 যেটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছি সেই টুকুই লিখলাম।

  বিঃদ্রঃ সম্পুর্ন লেখাটি তথ্য সংগৃহিত।

আমি মনেকরি এখানে যেকয়টি রথের মেলার কথা লিখলাম সেগুলি ছাড়া আরও অনেক অনেক রথ বার হয় আজকের দিনে।

কিছু রথের ঠিকানা::---


★(1)-মাহেশ । Mahesh :

পশ্চিমবঙ্গের সবেচেয়ে বিখ্যাত রথযাত্রার মধ্যে শীর্ষে  রয়েছে মাহেশের রথযাত্রা। প্রায় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি ধ্রুবনন্দ ব্রহ্মচারী দ্বারা শুরু হয় এই রথযাত্রা। কথিত আছে, সাধক ধ্রুভানন্দ ব্রহ্মচারী ৬২৭ বছর আগে পুরীতে গিয়ে প্রভু জগন্নাথকে ভোগ নিবেদনের জন্য স্বপ্নাদেশ পান। কিন্তু শ্রীক্ষেত্রে গিয়েও তিনি ভোগ দিতে পারেননি। শোনা যায়, ফিরে এসে তিনি ফের স্বপ্নাদেশ পান, গঙ্গায় ভেসে আসা নিমকাঠ দিয়ে বিগ্রহ তৈরির জন্য। পাশাপাশি মানা হয়, মাহেশের রথের চূড়ায় একটি নীলকণ্ঠ পাখি বসে থাকে। পুরীর রথযাত্রা শুরু হলে সে উড়ে যায়। এরপরেই রথ তার যাত্রা শুরু করে অর্থাৎ চলতে শুরু করে। মানা হয়, এই নীলকণ্ঠ পাখিটি শুধু প্রধান পুরোহিতই দেখতে পান।

প্রায় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাশি সময় থেকে শুরু হয় মাহেশের রথযাত্রা

আগে কাঠের রথ থাকলেও,  ১৩৭ বছর আগে তৈরী করা হয় লোহার রথ। যা তৈরী করে মার্টিন বার্ন কোম্পানী 

 ১২৫ টন ওজনের এই রথ ৫০ ফুট উঁচু এবং এতে রয়েছে ১২টি চাকা। বর্তমানে এই রথের দেখভাল করেন কলকাতা শ্যামবাজারের বসু পরিবার। চারতলা বিশিষ্ট এই রথের একতলায় চৈতন্যলীলা, দ্বিতীয় তলে কৃষ্ণলীলা এবং তৃতীয় তলে রামলীলা চিত্রিত আছে। চার তলায় বসানো হয় বিগ্রহ। যেহেতু, নারায়ণই কলিকালের জগন্নাথ, সেই কারণে নারায়ণ শিলাকেই প্রথমে রথে চড়ানো হয়। তারপর সুভদ্রা, বলরাম এবং সব শেষে রথে তোলা হয় জগন্নাথ দেবকে। প্রতি বছর মাহেশের রথযাত্রায় অংশ নেন এ রাজ্যের ছাড়াও ভিন রাজ্যের বাসিন্দারাও। মাহেশে রথযাত্রা ছাড়াও জগন্নাথ মন্দিরের পাশে স্থানপিঁড়ির মাঠে মেলাতে ভক্ত ও আম জনতার জন্য বড় আকর্ষণ।


★ (2)--মায়াপুর । Mayapur :

মায়াপুরে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত মেলা চলে মেলা চলে।

এক সময়ে মায়াপুর আর রাজাপুর নামের দু’টি গ্রাম ছিল। রাজাপুরের বেশিরভাগই ছিলেন বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষ। কথিত আছে যে, ৫০০ বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। যার পর থেকেই রথযাত্রার সূচনা করা হয় এখানে। তবে মায়াপুরের মন্দির থেকে কিন্তু রথ বের হয়না। বরং রথে চড়ে বলরাম, জগন্নাথ এবং সুভদ্রা আসেন এই মন্দিরে।  সেখানে ৮দিন থেকে ৯ দিনের মাথায় রথে চড়েই আবার ফেরত যান রাজাপুর।

৫০০ বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর থেকেই রথযাত্রার সূচনা করা হয় মায়াপুরে।


★-(3)-- ইসকন।-----

কলকাতার ইসকনের রথযাত্রা পুরীর রথযাত্রার পর হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা। ১৯৭২ সালে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য, কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি অভয় চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে রমরমা করে পালন করা হয় এখানে রথযাত্রা। চলতি বছর ইসকনের রথযাত্রা ৫২ বছরে পড়ল।

এবারের রথযাত্রায় ইসকন বিশ্বব্যাপী ১৭০টিরও বেশি দেশে এবং ৮০০টিরও বেশি শহর ও জনপদে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। 

এবার ভক্তরা নিজেদের বাড়িতে রান্না করা নিরামিষ ভোগ জগন্নাথদেবকে নিবেদন করতে পারবেন। সরাসরি পূজারিরা রথেই তা পুজো করে ফেরত দেবেন ভক্তদের।


★.(4)- শ্যামবাজার থেকে ডানলপ  বি. টি. রোডের উপর চিড়িয়া মোড়ে  রাস্তার দুইদিকে মেলা হয়। শুদু রথের দিন এই মেলা বসে।

★.(5)  ব্যারাকপুরে ষষ্ঠীতলাতে সাত দিন ধরে রথের মেলা হয়।

★.★(6)--রথতলা, কমারহাটি বেলঘরিয়া::–--

কলকাতায় ২০০ বছর ধরে ধুমধাম করে রথযাত্রা পালন করা হয় কামারহাটির  রথতলায়। 

৩৩ ফুট উচ্চতার রথে চেপে এদিন রথতলা থেকে মাসির বাড়ি যাবেন জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা। রথযাত্রার পাশাপাশি রথতলা বিখ্যাত রথের মেলার জন্যও।

শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বেলঘরিয়ার রথ তলার মতিলাল সেন ঠাকুরবাড়ির রথ দর্শনে এসেছিলেন। 

বেলঘড়িয়াতে বি টি রোডের উপর রথতলার মোড়ে কেবলমাত্র রথের দিন মেলা হয়। রাস্তার দুইপাশে মেলা বসে।


★ (7)- বেলঘড়িয়ার 234 বাস স্ট্যান্ডের কাছে দেওয়ান পাড়ার মাঠে একটা নতুন মেলা গত বছর থেকে শুরু হয়েছে। চলবে 10 দিন। এছাড়াও বেলঘরিয়া দেশপ্রিয় নগরে একটি রথের মেলা হয় ইদানিং হচ্ছে।

★.(8)-বেলঘড়িয়া স্টেশনের কাছে সাতের পল্লিতে ISCON এর মেলা হয় 7 দিন ধরে। রোজ ভোগ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

★.(9)--  সোদপুরে পঞ্চাচরণতলায় মেলা চলে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত।

★.(10)-- বিরাটির মহাজাতি নগরে বড় করে রথের মেলা হয়। চলে প্রায় এক মাস। মহাজাতি নগর বিরাটী স্টেশন এবং বিরাটী মোড়ের মাঝামাঝি জায়গায়।

★.(11)-- বারাসাতের সরজিনী পল্লী ( হেলাবরতলা) তে একটি ভালো রথ এর মেলার আয়োজন হয় রথ থেকে উল্টোরথ মেলা থাকে।

★.(12)--  বারাসাতের  ডাকবাঙলো এর কাছে রথতলায় মেলা বসে। এটি 

হৃদয়পুরের মেলা হিসাবেই সকলে জানে। 

এটি একটি বড় মেলা 7 দিন চলে। 


★ (13)--. নাগেরবাজার মোড় থেকে ডায়মন্ড সিটি পর্যন্ত যশোর রোডের দুইপাশে মেলা বসে। কেবলমাত্র রথের দিন মেলা হয়।

★.(14) এয়ারপোর্ট 1নম্বর এর কাছেও একটা রথ এর মেলা হয় যেটা দমদম গোড়াবাজার থেকে সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি(মিলন সংঘ ক্লাব এর কাছে) অব্দি আসে, মেলা রথ থেকে উল্টারথ অব্দি থাকে।

★.(15)   শিয়ালদহ এ মৌলালীর কাছে 1 মাস ধরে মেলা হয়। গত বছর হয় নি। এ বছরে হবে কিনা ঠিক নেই। (সম্ভবত যানজটের কারণে মেলাটি বন্ধ হয়ে গেছে)

★.(16)-- সল্টলেক করুনাময়ী 15দিন ধরে মেলা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই বছর ১৩ ই জুলাই থেকে রথের মেলা শুরু হচ্ছে।

★.(17)-- কসবাতে রথতলা মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছএ  15 দিন ধরে রথের মেলা হয়।

★.(18)-- রুবির কাছে ও 1 মাস ধরে মেলা হয়।

★. (19)--মুকুন্দপুরে 15 দিন ধরে মেলা হয়।

★.(20)-- দুর্গানগর স্পোর্টিং ক্লাব এর মাঠ এ একটা বড় রথ এর মেলা। বন

★.(21)-- হুগলী জেলার শ্রীরামপুর এর কাছে বিখ্যাত মাহেশের রথ। অতি প্রাচীন এই রথ। এখনে রথ উপলক্ষে এক মাস ব্যাপি রথের মেলা চলে।


★  (22)--হুগলির দশঘড়ার রথ:::---

এখানে শুরুতে তিনটি রথ ছিল।

উড়িষ্যার কর্নপুরের দেবকিশোর রাজবংশের উত্তরসূরি সদানন্দ দ্বাদশ শতকে এই রথের সূচনা করেন।একাধিক বার এই রথ আগুনে পুড়ে যায়। রথ ঘিরে অনেক মামলা মোকদ্দমাও হয়েছে। 

পরবর্তীকালে জনৈক বিশ্বাস পরিবারের উদ্যোগে এই প্রাচীন রথ কিছুটা হলেও কৌলীন্য ফিরে পায়।


★. (23)--- দক্ষিণ কলকাতায় ঢাকুরিয়া ব্রীজের কাছে রথের দিন এবং উল্টো রথের দিন মেলা হয়।

★. (24)---আগে রাসবিহারী মোড়ে যে মেলা  হতো সেটা যানবাহনের অসুবিধার জন্য সরানো হয়েছে। এখন হয় চেতলাতে মেলা বসে। চেতলা ব্রিজ এর নিচে আদি গঙ্গার ধারে চলে এসেছে । মেলা চলে 15 ধরে। 

★.(25)-- গড়িয়াতে 6 বাস স্ট্যান্ড থেকে নাকতলা পর্যন্ত মেলা বসে। এখন নাকতলা গীতাঞ্জলি মেট্রার সামনে বড় করে রথের মেলা বসে। রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা কেও সাজান হয়। আগে এক মাস ধরে এই হোত। এখন শুধু রথের দিন ও উল্টো রথের দিন মেলা হয় । বহু বছরের পুরনো এই মেলা। মূলত গাছ বিক্রি হলেও অন্যান্য জিনিসও পাওয়া যায়।

★.(26)--- হুগলী জেলায় গুপ্তিপাড়া স্টেশনের কাছে রথের মেলা বিখ্যাত। হাওড়া থেকে কাটোয়াগামী ট্রেনে চেপে যাওয়া যায়। লোকাল ট্রেনে যেতে সময় লাগে 1 ঘন্টা 40 মিনিটের মত সময় লাগে। মেলা 7 দিন ধরে চলে।

★ (27)-গুপ্তিপাড়া::-----

পশ্চিমবঙ্গের আরেক প্রাচীন ও খ্যাত নাম রথযাত্রা হলো গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। ১৭৪০ সালে মধুসূদানন্দ দ্বারা সূচনা হয় গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। এখানকার রথযাত্রার রয়েছে এক আলাদা বৈশিষ্ট্য। প্রথমত, গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রায় রথের উচ্চতা হয় ৩৬ ফুট। এমনকি আগে গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির থেকে ১২ চাকার রথে চেপে যাত্রা করতেন জগন্নাথ দেব। তবে ১৮৭৩ সালে এক দুর্ঘটনার  পরে কমিয়ে দেওয়া হয় রথের  চাকার সংখ্যা। এছাড়াও গুপ্তিপাড়ার রথ যাত্রায়  ৪০ কুইন্টাল খাবার লুঠ করারপ্রথা আছে। 

★.(28)---  খিদিরপুর মোড়ে রথের মেলা । 70 বছর বেশী সময় ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। মেলা বলে মূলত উপর মেইন রাস্তার দুইধারে । খিদিরপুর মিশ্র ধর্মের মানুষের এলাকা বলেই সব শ্রেণীর মানুষই এই মেলায় অংশ নেন ।

★. (29)-- নৈহাটি তে এক সপ্তাহ ধরে মেলা থাকে। এই রথের মেলার নাম

বঙ্কিমেই রথ। নৈহাটির কাঠালপাড়ার 

রথও সেই রাধারানী উপন্যাসের মতোই প্রাচীন।কারণ এই রথ শুরু করেছিলেন সাহিত্যসম্রাটের দাদা ।তিনি এই রথটি 

তৈরি করে মা দুর্গাসুন্দরীর নামে উৎসর্গ কিরেছিলেন।

 রাধাবল্লভ-এর পুজো হয়। এক সপ্তাহে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিটি খণ্ডের কাহিনী মূর্তির মাধ্যমে সাজানো হয়। রাধাবল্লভ মন্দির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের পারিবারিক মন্দির। 1862 সালে বঙ্কিমচন্দ্রের বড় দাদা শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় এই রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। মেলা উপলক্ষে তাঁর আবাস গৃহ টিও খোলা থাকে। নৈহাটী স্টেশন এর ঠিক আগে- ডান দিকে পড়বে এই মেলাটি। স্টেশন এ নেমে পুব দিকে এসে যে কোনো লোক কে জিজ্ঞেস করলে দেখিয়ে দেবে।

★. (30)---তারাপীঠে একমাত্র রথের দিন বিকেলবেলা "তারা মা" রথে চেপে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করেন। বাতাসা বৃষ্টির দিয়ে এর সূচনা হয়। এই উপলক্ষে মেলা বসে।

★.(31)--- চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের যাদবেন্দ্রনাথ ঘোষ ছিলেন চাল ব্যবসায়ী।

স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৭৭৪সালে রথযাত্রার সূচনা করেন তিনি।

গঞ্জবাজারের রথ হয় এবং মেলা হয় সোজারথ থেকে উল্টারথ পর্যন্ত।  খুব ঐতিহ্যবাহী মন্দির ও রথযাত্রা আর ওখানকার মানুষজন ও খুব ভালো।

লক্ষ্মীগঞ্জ থেকে বেরিয়ে তালডাঙায় মাসির বাড়ি গিয়ে পৌঁছয় রথ।

★.(32)-- দুর্গাপুরে চিত্রালয় মেলার মাঠে রথের মেলা হয়। এছাড়াও দুর্গাপুরে ISKON একটা মেলা হয়।  

★.(33)---- দক্ষিন ২৪ পরগনার রাজপুরের কাছে হরিনাভীতে বেশ বড় করে একটা মেলা হয়। এটা অনেক পুরানো মেলা। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দক্ষিন দিকে 10 মিনিট গেলে এই মেলাটি উড়বে। মেলা চলে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত।

★.(34)--  দক্ষিন ২৪ পরগনার বারুইপুরে চৌধুরি জমিদার বাড়িতে রথযাত্রা উৎসব হয় । এই উপলক্ষে মেলা হয়। মেলা চলে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত।

★. (35) হাওড়া জেলায় আন্দুলে একটা বড় রথের মেলা হয়। আগে 15 দিন ধরে চললেও এখন 10 দিন মেলা চলে।

★. (36)--কলকাতার পার্ক স্ট্রীট ময়দানে ISKCON রথটি রথের দিন থেকে উল্টো রথ পর্যন্ত রাখা থাকে। সেই উপলক্ষে  ISKCON দ্বারা একটা মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে প্রতিদিন ভোগ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

★. (37)--গঙ্গাসাগরে কাটাখালের কাছে রথের মেলা হয়। 7 দিন ধরে চলে। 

★. (38))উত্তর চব্বিশ পরগনার সোদপুরে এক মাস ধরে মেলা বসে। জায়গাটা  বঙ্কিম পল্লী খেলার মাঠ নাটাগর সোদপুর 

★.(39)-- কলকাতায়  57 ওয়ার্ডে( Dhapa Mothpukur ) রথের মেলা হয়।

★.(40) -- মধ্যামগ্রামে কালিবাড়ীর পাশে রথের মেলা বসে। 

★. (41)---বর্ধমানে কাঞ্চননগর এ রথ্তলা জায়গাটির নাম ই হয়েছে বিখ্যাত রথের মেলার জন্য। বর্ধমানের রাজবাড়ী টি আগে ছিল এই কাঞ্চননগর এলাকায়। সেই আমল থেকেই এই রথ যাত্রা ও রথের মেলা হয় এ আসছে। প্রায় যাবত হয় মেলাটি আগে এক মাস  5 এখন 7 দিন চলে। বর্ধমান স্টেশন থেকে কাঞ্চননগর টোটোতে যেতে 15 -20 মিনিট লাগে।

★.(42)--  এছাড়াও বর্ধমানে লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দিরেও রথের মেলা হয়। 

★.(43)-- পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় মহিষাদলে রাজবাড়ির কাছে অতি প্রাচীন রথের মেলা হয়। গত এখানকার রথটিও বিশাল বড়। 1776 সালে এই উৎসব এবং মেলা রানী জানকি দেবী শুরু করেন। মেলা চলে প্রায় 15 দিন।

★.(44)--- ত্রিবেণী তে রথের মেলা হয়। একটা হয় চন্দ্রহাটী গঙ্গার ধারে ডি কে হাইস্কুলের সামনে। আর একটা মনসা তলায় বাঁশবেড়িয়াতে পৌরসভার কাছেও একটা মেলা হয়। এইসব মেলা হয় সাতদিন ধরে।

★. (45)---ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে রথ উপলক্ষে মেলা বসে। 10-15 দিনের বেশি এই মেলা চলে। এছাড়াও ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে বিদ্যানগর, বিবিরহাট, রায়পুরের দিকে গেলে বা ওদিকে ডায়মন্ডহারবারের দিকে যাওয়া গেলেও রাস্তার ধারে ধারে রথ উপলক্ষে বহু বহু পুরনো মেলার চল আছে। 

★. (46)-----ভদ্রেশ্বরে গৌরহাটিতে রথে এবং উল্টো রথে মেলা হয়।

★.(47)--- কল্যানীতে রথতলাতে 10 দিন ধরে রথের মেলা হয়।

★.(48)-- হুগলী জেলার রাজবলহাটে বেশ বড় করে রথের মেলা হয়। এটিও একটি প্রাচীন রথ উৎসব। 

★.(49)--  হাওড়ার বেলগাছিয়াতে রথের দিন এবং উল্টোরথের দিন মেলা বসে। 

★. (50)--হাওড়া জেলার মৌরীগ্রামে বড় করে রথের মেলা হয়।

★. (51)--পশ্চিম মেদিনীপুর শহরে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত মেলা চলে ।

★.(52)-- টালীগঞ্জের কবরডাঙ্গাতে ( বেহালা ঠাকুরপুকুর এর কাছে) অনেক বছর ধরে রথের সময় মেলা বসে। চলে প্রায় 15 দিন।

★. (53)---বামনঘাটা বাসন্তী রোডের উপর তাড়দা রথের মেলা হয় এছাড়া ভোজেরহাটেও একটা রথের মেলা হয় 

★. (54)--বর্ধমানের অণ্ডালের কাছে উখরা তে প্রাচীন সময় থেকে রথ যাত্রা এবং এই উপলক্ষে বেশ বড় মেলা হয় এখানে ।

★.(55)--- বড়িশা শখের বাজারে পূজা কমিটি সামান্য দক্ষিনার বিনিময়ে সুন্দর ভোগ প্রদান করেন সাধারনের মধ্যে । এই উপলক্ষে মেলা বসে।

★.(56)--- শ্যামনগরে অহপুর ঘোষ বাড়ির মাঠে রথের মেলা হয়। 

★. (57)--হাওড়া জেলার জ়গদীশপুরে বড় করে রথের মেলা বসে। হাওড়া বা ধর্মতলা থেকে জাঙ্গীপাড়া বা চন্ডীতলা গামী বাসে করে এই জগদীশপুর যাওয়া যায়। E13/1, 57 এবং 57A নম্বরের বাস যায়। ধর্মতলা থেকে Baluhati - Esplanade (রুট নং –৩০) মিনিবাস যায়। এছাড়া শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে ডানকুনি ওখান থেকে ম্যাজিক গাড়িতে জগদীশপুর যাওয়া যায়। 


★-(58)--- ডানকুনির গরলগাছার রথ::--

এই রথের সূচনা করেন সেখানকার মুখোপাধ্যায় পরিবার । মুখার্জি বাড়ির দুর্গাপুজো যেমন বিখ্যাত ,তেমনি রথযাত্রা উৎসব হয় মহা ধুমধামের সঙ্গে।


★ (59)----আমাদপুর::----

 বর্ধমান জেলার মেমারি অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম আমোদপুর বা আমাদপুর। গ্রাম ছোট্ট হলেও, এই গ্রামে রথযাত্রা পালন করা হয় ধুমধাম করে। এই গ্রামের রথযাত্রায় অংশ নিতে ভিড় করেন অগুনতি ভক্তরা। গ্রামের জমিদার পরিবারের দেবতা হলেন রাধামাধব। সেই রাধামাধবকে নিয়েই হয় রথযাত্রা। এদিন তাঁর পুজো করা হয় গ্রামেরই এক প্রাচীন মন্দিরে। রথযাত্রার দিন সকালে প্রথমে রাধামাধবকে মা দুর্গার মন্দির বা দুর্গাবাড়িতে এবং পরে গোটা গ্রামে ঘোরানো হয়।


★ (60)--রাজবলহাট::--

হুগলির রাজবলহাট খুবই বিখ্যাত জায়গা। এই জায়গা তাঁত কাপড়ের জন্য পরিচিত হলেও, রথযাত্রার জন্যও বিখ্যাত রাজবলহাট। আমাদপুরের মতোই এখানেও রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকেন না। এই রথে থাকেন এলাকার বিখ্যাত মন্দিরের পূজ্য দেবতা রাধাকৃষ্ণ ও

গৌর-নিতাই। ১২চাকার এই রথটি দড়ির বদলে লোহার শিকল দিয়ে টানা হয়।


★ (61)---মহিষা দল,পূর্ব মেদিনীপুরের রথ::--

   রাজত্ব না থাকলেও রাজপরিবারের ভূমিকাই প্রধান। 

মহিষাদলে কুলদেবতাকে নিয়ে মাসির বাড়ি চললেন জগন্নাথ।

শ্রী ভগবতীচরণ প্রধান ১৮৯৭ সালে তাঁর ‘মহিষাদল রাজবংশ’ বইতে উল্লেখ করেন–“মহিষাদলের রথ বঙ্গের একটি প্রধান দৃশ্য। ইহার উৎসব উপলক্ষ্যে নানা স্থানের ব্যবসায়ীগণ স্ব স্ব পণ্যদ্রব্য আনয়ন করে। সপ্তাহকাল ব্যাপিয়া নরস্রোত জলস্রোতের ন্যায় যেন কেন্দ্রাভিমুখে ধাবিত হইতে থাকে। রাজপথ মস্তকময় হইয়া উঠে। উৎসবভূমি যেন একটি সঞ্চরমান মস্তকময় ক্ষেত্ররূপে প্রতীয়মান হয়।” 

বাংলার শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মহিষাদলের রথযাত্রা প্রায় 215 বছর ধরে চলা এই রথযাত্রা বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম গর্ব। বলা হয় পুরী, মাহেশের পরেই মহিষাদলের রথ তার ব্যাপকতায় ও বৈচিত্র্যে অনন্যতা দাবি করে।

মহিষাদলের রথযাত্রা মহিষাদল রাজপরিবারের অবদান। আজও রাজপরিবারের ভূমিকাই প্রধান। 

পুরীর রথযাত্রার অনুকরণে আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়াতে যে রথযাত্রার সূচনা হল তা ছিল কাঠের সতেরো(১৭) চূড়ার রথ। তখনকার দিনে তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৬০০০ সিক্কা টাকা। রথটি বর্গাকার হয়ে কৌণিক ভাবে উঠে গেছে। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ  ৩২ ফুট। দ্বিতীয় তলের দৈর্ঘ ও প্রস্থ ২৫ ফুট। তৃতীয়তল ২০ ফুট, চতুর্থ তল ১৫ ফুট। পঞ্চম তলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হল ১০ ফুট। চৌত্রিশটি কাঠের চাকা একলাইনে নেই যাতে দু-চারটি চাকা খারাপ হলেও রথ চলাচলে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। চাকাগুলো উচ্চতায় চার ফুট আর বেড় বারো ফুট। চারখণ্ড কাঠ দিয়ে একএকটা চাকা তৈরি।

সমস্ত রথে মোট বাহান্নটি খুঁটি আছে যার মধ্যে চারটে মোটা খুঁটি রথকে ধরে রাখে। চারটে খুঁটির মাঝে আছে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। রথের প্রত্যেক তলের চারিদিকে হেঁটে চলাফেরাও করা যায়।

এখন যে রথটি মহিষাদলের রথতলা থেকে গুণ্ডিচাবাড়ি যায় তার উচ্চতা এক থাকলেও চূড়ার সংখ্যা কমে তেরো হয়েছে। কথিত আছে 1860 সালে রাজা লছমনপ্রসাদ গর্গের জনৈক ফরাসী বন্ধু মঁসিয়ে পেরু রথ দেখতে আসেন এবং তখনই তিনি রথের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য একটি নকশা করেন। নকশায় যোগ হয় চারিদিকের ঝুলবারান্দা ও চারকোণের চারটি ঋষি মূর্তি। চূড়ার সংখ্যা কমে হয় তেরো। 

 রাজা সতীপ্রসাদ গর্গ দুটো সাদা ঘোড়া রথের আগে যোগ করেন। মহিষাদল রাজাদের অন্যান্য স্হাপত্যের মতো রথটির কাঠের কাজ মনোমুগ্ধকর। রথের কোণে কোণে লতাপাতার নকশার বদলে হাতি, ঘোড়া, বাঘ, সিংহ প্রভৃতি জানোয়ারের উপর বর্শা হাতে সৈন্য বা নর্তকীদের মিছিল দেখা যায়। 

তারাপদ সাঁতরার মতো গবেষক এগুলিকে ‘মৃত্যুলতা ভাস্কর্য’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রা

 সত্যিই অভিনবত্বের দাবি রাখে। 

রানি জানকী স্বপ্নাদেশে  গোপাল জিউকে এক মাঠের মাঝখান থেকে উদ্ধার করেন।

এই গোপাল জিউই রাজবংশের আরাধ্য

দেবতা।

 আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে রথে আরোহণ করেন রাজবংশের আরাধ্য দেবতা গোপাল জিউ। সঙ্গে থাকেন কেবলমাত্র জগন্নাথদেব। ঠিক আগের দিন রাজবংশের আরাধ্য শালগ্রাম শিলা ‘শ্রীধর জিউ’কে রথে এনে  ‘রথের চক্ষুদান’ উৎসব হয় যা ‘নেত্র উৎসব’ হিসেবে বহুল জনপ্রিয়। 

আটাশ থেকে তিরিশ কিলোগ্রাম ওজনের এক একটি পিতলের কলস ও দশ থেকে বারো কেজি ওজনের এক একটি চক্র রথের চূড়ায় লাগানো হয়। রথের দিন শোভাযাত্রা করে জগন্নাথ দেব, গোপাল জিউ ও শ্রীধর জিউকে নিয়ে এসে রথের ওপরে বসানো হয়। পুরীর রথে টান পড়লেই রাজবাড়ির কেউ পালকি করে এসে রথের রশিতে টান দেন। 

অসংখ্য ভক্তের প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে রথ এগিয়ে চলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের গুণ্ডিচায় মাসির বাড়ির দিকে।

 এই উৎসব চলে প্রায় পনের দিন। 

এ রথের মেলা বিখ্যাত প্রচুর ফল যেমন  

 আম-কাঁঠাল, এবং মাদুর, চারাগাছের জন্য বিক্রয়ের জন্য । কয়েকদিন ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। 

কয়েকশ লরি বোঝাই করে আসতো কাঁঠাল । দোকানে দোকানে বড়, ছোট, পাকা, খাজা কাঁঠালের সে স্তূপ দেখার মতো। 

চলতো কাঁঠাল মুড়ির বনভোজন,

কলেজ-স্কুল প্রাঙ্গনে।

 মেলার প্রধান আকর্ষণ মৃৎশিল্প, নাগরদোলা, সার্কাস। 


এই  রথের মেলায় ব্রিটিশ সরকারের 

অত্যাচারের কাহিনী জানলে শিউরে উঠতে হবে::----


( "রথমেলার পূর্ব হতে মদ, তাড়ি ও বিদেশী বস্ত্রের দোকানে পিকেটিং হচ্ছিল। রথমেলায় জোর পিকেটিং চলতে লাগল। পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় ভীষণ ভাবে প্রহার করে ছেড়ে দিতে লাগল। রথের দিন মদ দোকানে গোয়ালবেড়্যা গ্রামনিবাসী শ্রী ফণীন্দ্রনাথ পাঞ্জা পিকেটিং করতে থাকে। তাকে পুলিশ ধরতে এলে সে রাস্তার উপর শুয়ে পড়ে। পুলিশ তার দু’পা ধরে পাকা রাস্তার উপর দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায়। সর্বশরীর রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। সমস্ত মানুষ ক্ষেপে ওঠে। মেলাতে প্রায় পাঁচশ স্বেচ্ছাসেবক ও সেবিকা উপস্থিত হয়। স্বেচ্ছাসেবক এবং স্বেচ্ছাসেবিকারা জাতীয় পতাকা হাতে প্রচার করতে লাগলেন। এই সব দেখে বর্বর পুলিশ তাদের উপর যে অত্যাচার চালায়, তা বর্ণনাতীত।”

পুলিশের অত্যাচারের বর্ণনা প্রচার করার সময় পুলিশ সুতাহাটা থানার শ্রীমতী সুবোধবালা কুইতিকে গ্রেফতার করে। এর প্রতিবাদে সবাই বিদ্রোহ করে বলতে থাকে রথের ওপর জাতীয় পতাকা না ওড়ালে রথ টানা হবে না। প্রায় দু’শ হাত যাওয়ার পর সবাই রথের রশি ছেড়ে দিল। রথ দাঁড়িয়ে পড়ল। মানুষ রথে জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ব্যাপারে এককাট্টা। রাজপরিবার, পুলিশের কোনও অনুরোধেই কাজ হল না। এদিকে ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতা করার সাহস গর্গ পরিবারের ছিল না। বেগতিক বুঝে রাজার গড়ে আরেকটি যে ছোট রথ ছিল সেটি নিয়ে এসে বিগ্রহ বড় রথ থেকে নামিয়ে সেই রথে স্হাপন করে জগন্নাথদেবকে গুণ্ডিচাবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আটদিন পর ফের সেই ছোট রথে করেই জগন্নাথদেব রাজবাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন। বড় রথ পড়েই থাকে একইভাবে। বর্ষা শেষ হলে প্রায় একহাজার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে মাথাপ্রতি এক টাকা করে দিয়ে রথকে তার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়।

এখন মেদিনীপুর জেলার বহু স্হানে স্হানীয় ভাবে রথের মেলার প্রচলন হয়েছে তবুও মহিষাদলের এই রথযাত্রার আবেদন, গরিমা এবং ঐতিহ্য আজও অমলিন। সম্প্রতি রথটির আমূল সংস্কার হয়েছে। যদিও মেলার ধরন একটু হলেও পাল্টে গেছে, আগেকার মত এত দোকানপাট আর বসে না। আশা করা যায় সাধারণ মানুষের শুভকামনা ও আন্তরিক অংশগ্রহণে এই প্রাচীন রথযাত্রা বাংলার সংস্কৃতিকে আরও সম্পৃক্ত করবে। এগিয়ে যাবে বছরের পর বছর।" )

=======================


Sunday, June 25, 2023

29>|| জগন্নাথ দেবের রথের রশি স্পর্শের মহিমা।

  29>|| জগন্নাথ দেবের রথের রশি স্পর্শের মহিমা।

রথের রশির নাম বাসুকি। জগন্নাথ দেবের রথের রশি একটি বার স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন ভক্তরা। পুরী, কলকাতার রথ কিংবা বিশ্বব্যাপী রথ সর্বত্রই রথের রশি ছুঁয়ে দেখার জন্য মানুষের ভীড় উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। আসলে ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথ দেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না। 

এক সময় পুুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথ দেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হত কোনো কোনো ভক্ত।

কেন এই অদ্ভুত মৃৃত্যুবরণ?

মানুষের বিশ্বাস, শ্রীপুরুষোত্তমের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গারোহণ নিশ্চিত করা যায়। 

শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী অসুস্থতার কারণে একবার রথযাত্রার দিন জগন্নাথ দেবের চলন্ত চাকার তলে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন। তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন- সনাতন, এরকম দেহ ত্যাগে যদি কৃৃষ্ণকে পাওয়া যেত তাহলে এক মূহুর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পন করতাম। কিন্তু দেহত্যাগে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যায় না। এরকম দেহত্যাগ হচ্ছে তমোগুণ। তমোগুণে কৃৃষ্ণকে পাওয়া যাবে না। ভক্তি ছাড়া, ভজন ছাড়া তাঁকে পাওয়ার উপায় নেই।

ইন্দ্রনীলময় পুুরাণের মতে, জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেও পুনর্জন্ম হয় না। 'পুনর্জন্ম ন ভূঞতে।' শ্রীজগন্নাথের বামন অবতার রথে। সেই রথ দর্শন করার পর একটু টানতে পারলেই পুনর্জন্ম হয় না। 

সূতসংহিতায় রয়েছে-  "রথে তু বামনাং দৃৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদতে।" অতএব ধার্মিক সনাতনী  বিশ্বাস করেন যে, রথের রশি ছোঁয়ার থেকে বড় পূর্ণ আর কিছুতে হয় না।

রথযাত্রা নিয়ে কপিল সংহিতায় আছে- "গুন্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।" অর্থাৎ জগন্নাথদেব বলছেন, গুন্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি আমাকে দর্শন করবে সে কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ভুুবনে যাবে।

রথের রশি ছুঁয়ে রথ টানা শুধু নয়, বেশীর ভাগ মানুষ রথের রশি যতটুকু পারে ছিঁড়েও নেয়। টুকরো টুকরো রথের রশির সুতো মাদুলি করে ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে ও গলায় পরিয়ে দেয়। বড়রাও পরেন। মানুষের বিশ্বাস এই মাদুলি সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবে। অসুখ-বিসুখ হলেও তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠবে, অনেকেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে। ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে ওঠে। এরকম কারও মাথায় রশির টুকরো অংশ ছুঁইয়ে দিলে কিংবা তার বালিশের নীচে রেখে ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন আসে না।

স্কন্দপুরাণ,  বামদেব সংহিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে, জগন্নাথদেবের রথের রড়ি ধরে টানতে পারলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।  রথ বা উল্টোরথে দেখা যায় ছোট-ছেলেমেয়েরা খেলনা রথ টানে,পথচলতি বয়স্ক লোকেরাও সেই রথের রশি একবার স্পর্শ করে। আসলে মানুষের বিশ্বাসটাই বড় কথা। 

        জয়_শ্রীজগন্নাথ।

           (সংগ্রহীত)

==========================


28>|| বিশাল বুদ্ধমূর্তি ||

     28>  || বিশাল বুদ্ধমূর্তি ||

                 

বুদ্ধমূর্তি::--‘লেশান জায়ান্ট বুদ্ধমূর্তি'।


৭১ মিটার (২৩২ ফুট ১১.276 ইঞ্চি)

উচ্চতার এই উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তিটি। পায়ের পাতার বিস্তার ৯ মিটার

  যাতে একশো জন মানুষ অনায়াসে বসতে পারেন। তাঁর ২৪ মিটার চওড়া কাঁধটি একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান আকারের। এমনকি মূর্তির পায়ের কড়ে আঙুলের নখেও এক জন মানুষ বসতে পারেন অনায়াসে। 

বুদ্ধমূর্তির ১০ মিটার চওড়া মাথায় নির্মিত কোঁকড়ানো চুলের স্থাপত্যে নিপুণ ভাবে তৈরি করা হয়েছিল ১০২১টি ঝুঁটি বা খোঁপা।

বুদ্ধমূর্তির কানগুলি প্রতিটি প্রায় সাত মিটার লম্বা। তবে এই কানগুলি কিন্তু নির্মিত কাঠ দিয়ে, ওপরে মাটির আবরণ। সেই প্রাচীন সময়ে কাঠের তৈরি এই কানগুলি কী ভাবে পাথরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল, সেই কারিগরি কৌশল বিস্ময়কর। তবে সব থেকে বিস্ময়কর, মূর্তিতে বৃষ্টি ইত্যাদিতে জমে যাওয়া জল নির্গমনের জন্য মূর্তির ভিতরে নিষ্ক্রমণ-নালি বা পথ তৈরির ভাবনা এবং তৈরির কারিগরি কৌশলটি। 


যাকে বলাহয় ‘লেশান জায়ান্ট বুদ্ধদেব'।

এটি আছে চিনের সিচুয়ান প্রদেশে।

মিনজিয়াং, দাদু এবং কুইনজ এই তিন নদীর সঙ্গম স্থলে।

চিনের তিন নদীর সঙ্গমস্থলে বুদ্ধদেবের  এই প্রস্তর-স্থাপত্যটি হাজার বছরের বেশি প্রাচীন।


সওয়া সহস্র বৎসরেরও বেশি সময়ের প্রাচীন এই বিশাল বুদ্ধ মূর্তি তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলের এক পাহাড়ের গায়ে পাথর কেটে তৈরি ।'লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ’ যেটি

১৯৯৬ সালে পেয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর তকমা। এই অনন্য স্থাপত্যকর্মটি হয়ে উঠেছে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটনকেন্দ্র। প্রতি বৎসর পঁচিশ লক্ষেরও বেশি মানুষ আসেন এটি দেখতে।

বুদ্ধমূর্তিটির নাম ‘লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ’। 


এটি  প্রাচীনতম এবং বুদ্ধের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম প্রস্তর-স্থাপত্য। অবস্থান চিনের সিচুয়ান প্রদেশের লেশান শহরের পূর্ব দিকে। সংলগ্ন পাহাড়টি মাউন্ট লিংগিয়ান। এই পাহাড়ের লাল বেলেপাথর সরাসরি কেটে খোদিত ৭১ মিটার উচ্চতার এই উপবিষ্ট বুদ্ধমূর্তিটি। 


অনিন্দ্য শিল্পবোধ আর চমৎকার কারিগরি কুশলতায় তা নির্মিত হয়েছিল হাজার হাজার শ্রমিকের পরিশ্রমে। 


এই বুদ্ধ মূর্তি-র অনন্যতা যেমন নিখুঁত শিল্পসৌষ্ঠবে, তেমনই তার আকারের বিশালত্বেও। জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়েছিল রীতিমতো বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এবং সামনে থেকে যাতে নজরে না আসে সেই আড়ালটি বজায় রেখে।


‘লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ’ নিয়ে স্থানীয় মানুষেরা বলেন, ‘পাহাড়টিই বুদ্ধ আর বুদ্ধই একটি পাহাড়’। এ নিয়ে প্রচলিত আছে অনেক অলৌকিক বিশ্বাস। ওই অঞ্চলের মানুষেরা মনে করেন, স্থানীয় বিভিন্ন আনন্দ বা দুঃখের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ফুটে ওঠে বুদ্ধমূর্তির মুখে। দুঃখে তাঁর চক্ষু হয় নিমীলিত, আর সুখের ঘটনায় মুখে ফুটে ওঠে আনন্দের অভিব্যক্তি। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আবহাওয়ার পরিবর্তন ও বায়ুদূষণের প্রভাবে এমনটা মনে হতে পারে, আবার কাজ করতে পারে স্থানীয়দের আবেগ ও কল্পনাপ্রসূত বিভ্রম। আবার বুদ্ধমূর্তির মাথার পিছনে কখনও কখনও দেখা যায় জ্যোতির্বলয় বা ‘হেলো’। বিজ্ঞানীদের মত, এটি মেঘের জলকণায় সূর্যালোক প্রতিফলনের ফল।

=========================




Friday, June 17, 2022

27> জগন্নাথদেবের "স্নান যাত্রা"র মহোৎসব। এবং আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ-----

 27>পুরীর শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের "স্নান যাত্রা"র

 মহোৎসব। এবং আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ--------

জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীজগন্নাথদেবের বাৎসরিক স্নান যাত্রা মহোৎসব হয়।

স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রা উৎসবের শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি হিসেবে পালন করা হয়। 

পান্ডারা বাইরের ভক্তদের বুঝিয়ে দেন যে স্নানযাত্রায় বেশি স্নান করানোর ফলে জগন্নাথ মহাপ্রভুর জ্বর হয়েছে। এই পনেরো দিন নিরোধন গৃহে বহু কর্মকাণ্ড হয়, যা সাধারণের কাছে 'গুপ্ত' বিষয়।

নিরোধন গৃহ বা আঁতুড় ঘরে নিয়ে গিয়ে শ্রীজগন্নাথদেবকে যখন পনেরো দিন রাখা হয় তখন কী করেন তিনি ? 

স্নান যাত্রার আগে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে সিল্কের কাপড় পরিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি এক স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির বা জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনেই এই স্নান বেদী তৈরি করা হয়। এই বেদীকে বলা হয় স্নান বেদী। এটি এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদীতে বসা বিগ্রহ সকল দেখতে পাওয়া যায়। বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয় ও ধুপ ধুনা অর্পণ করা হয়। স্নানের জন্য সোনার তৈরি কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জলে কোন কিছু না পড়ে, এমনকি তাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস দ্বারাও যাতে জল দূষিত না হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র ভরা জল দিয়ে অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। তাঁদের দিব্যতনু বেয়ে সেই জল নেমে আসে। তারপর সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের জ্বর হয়। জ্বর সারানোর জন্য পাচন খাওয়ানো হয়। আসলে জগন্নাথদেবের মানবলীলার এটি একটি রূপ।

রাজা ইন্দ্রদুম্নের প্রতি জগন্নাথদেবের আদেশ ছিল, এই মহাস্নানের পর পনেরো দিন শ্রীজগদীশকে অঙ্গরাগবিহীন বিরূপাবস্থায় কেউ যেন দর্শন করতে না পারে।

তাঁর আদেশানুসারে এই পনেরো দিন মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে। এ সময়কে বলা হয় জগন্নাথদেবের অনবসরকাল। স্নান পূর্ণিমা থেকে উভা অমাবস্যা পর্যন্ত। শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের জগমোহনের পাশে তিনি এই এক পক্ষকাল অবস্থান করেন।

জয় শ্রীশ্রীজগন্নাথদেব ।।

আবার এই স্নান যাত্রাতে সাথে জুড়ে আছে "আত্মারামের কৌটো" এবং বেলুড় মঠে শ্রীশ্রী জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উৎসব।

"আত্মারামের কৌটো" রহস্যঃ

--------------------------------------------------

শ্রী শ্রী ঠাকুরের অস্থিভস্ম অল্প অল্প পরিমাণে বহু মঠে ছড়িয়ে আছে, যেমন বেলুড় মঠ, চেন্নাই মঠ, মুম্বাই, ভুবনেশ্বর, শিলং, কাশী, বৃন্দাবন, রাজকোট, জামতাড়া, কামারপুকুর, যোগোদ্যান, উদ্বোধন, জয়রামবাটী ইত্যাদি আশ্রমে। এছাড়াও ঢাকা ও সিঙ্গাপুরেও রয়েছে এই অস্থিভস্ম।

বেলুড় মঠে ঠাকুরের বেদীতে প্রোথিত আছে এর এক অংশ, অপরাংশ সযত্নে রক্ষিত থাকে আরেকটি বিশেষ জায়গায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে (মূলত তিনদিন যেমন আজ স্নানযাত্রার দিন, দূর্গাপজোর অষ্টমীর দিন ও ঠাকুরের জন্মতিথির দিন) এটি মূল গর্ভগৃহে এনে পূজা করা হয়।

১৪-ই জানুয়ারী ১৯৩৮ সালে বেলুড়মঠে বর্তমান মন্দিরের নির্মানকার্য শেষ হলে বিজ্ঞানানন্দ মহারাজ নতুন মন্দিরে "আত্মারামের কৌটো" এনে প্রতিষ্ঠা করেন।।


জয় ঠাকুর জয় মা জয় স্বামীজী জয় গুরুদেব।

                  (সংগৃহীত)

       <--আদ্যনাথ রায় চৌধুরী-->

===========================

  জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রার অনেক কথাই জানি আমরা।

তবুও, অনেক জেনেও, কিছু রয়েজায় অজানা।

আজ সেই কিছু অজানাকে জানাতে লিখছি কিছু পুঁথি ঘেঁটে।

যেন না থাকে কোন  সংশয় মনের কোণে।


★জগন্নাথ কে...? ★স্নান যাত্রা কী...?

  আজ বলবো সেই কথা::-----

♥যে গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ।♥♥♥

 জয় বলো শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের জয় বলো।

ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর। সংস্কৃতি ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে-ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর। 

স্কন্ধ পুরাণে রথযাত্রার মহিমা বর্ননা করে বলা হয়েছে- যিনি গুন্ডিচা মন্দিরে (জগন্নাথের মাসীর বাড়ী) ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, তিনি সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন।

স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ অবলোকন করা যায়।

অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল, বাগান ও গাছের চিত্রকল্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়। তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ, ধুনা অর্পণ করা হয়।

পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়।

স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ, কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়।

এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়। স্নান যাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণ থেকে দূরে রাখা হয়। এই ১৫ দিন মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ। এই সময় ভগবান জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ১৬ তম দিন থেকেই রথ 

যাত্রা শুরু। ভগবান জগন্নাথ দেব তার ভক্তদের কৃপা করার জন্য রাজ পথে নেমে আসেন। প্রথা অনুযায়ী, স্নান যাত্রা সাঙ্গ হলে ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পুরোহিতরা জগন্নাথ এবং বলরামকে সাজিয়ে তোলেন গজানন বেশে বা হাতি বেশে, অর্থাৎ গণেশের রূপে। ফলে এ দিন জগন্নাথদেবকে একটি কালো হস্তীরূপে এবং বলভদ্রদেবকে একটি শ্বেত হস্তী রূপে চোখে পড়ে। যদিও সুভদ্রা হস্তীরূপ গ্রহণ করেন না, তিনি সেজে ওঠেন পদ্ম বেশে বা পদ্মের আকারে।

বলা হয়, একদা গণেশের ভক্ত গণপতি ভট্ট এই স্নান যাত্রার দিন এসেছিলেন পুরীতে জগন্নাথ দর্শনে। কিন্তু জগন্নাথ দর্শন করে তিনি তৃপ্ত হননি। তাঁর মন জগন্নাথের মধ্যেও খুঁজে চলেছিল কেবল গণেশকেই। তাই অপ্রসন্ন চিত্তে তিনি যখন ফিরে চলেছেন, বলা হয়, স্বয়ং জগন্নাথ এক বৃদ্ধ পুরোহিতের বেশে তাঁর পথ রোধ করেন। এবং ভট্টকে অনুরোধ করেন আরেকটিবার চতুর্ধা মূর্তি দর্শনের। এ বার যখন ভট্ট মন্দিরে পা রাখেন, অবাক হয়ে আবিষ্কার করেন জগন্নাথকে গজানন বেশে। সেই কথা স্মরণে রেখেই প্রতি বছর স্নান যাত্রায় সেই থেকে জগন্নাথ এবং বলভদ্রকে সাজিয়ে তোলা হয় গজানন বেশে।

           (সংকলিত)

       <--আদ্যনাথ রায় চৌধুরী-->

=========================


Sunday, September 19, 2021

26> মার্কণ্ডেয় মুনি ও কল্পক্ষয় দর্শন::---

26> মার্কণ্ডেয় মুনি ও কল্পক্ষয় দর্শন::---

Diary- ভ্রমন-(29)  psge- (42)

মার্কণ্ডেয় মুনির সপ্তকল্প ক্ষয় দর্শন ও কীর্তন::---


পঞ্চপাণ্ডব গণ বনবাস কালে 

বিন্ধ্যপর্বত চূড়ায় অমরকণ্টকে, যেখানে আছে অতি সুন্দর কয়েকটি আশ্রম সংলগ্ন মনোরম স্থান।  

সেই নয়নমনোরম কাননে গমন পূর্বক ঐ স্থানের আশ্রমে তরুন অরুনকান্তি মুনি মার্কন্ডেয়ের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।


ধর্মনন্দন রাজা যুধিষ্টির মার্কন্ডেয় মুনিকে

 জিজ্ঞাসা করেছিলেন  —  "হে বিপেন্দ্র ! 

আমি জানি যে সপ্তকল্প অবসান পর্যন্ত আপনার দীর্ঘায়ু। কল্পক্ষয় হইবার পর , সকল লোক , স্থাবর ও অস্থাবর সকল কিছুই বিনষ্ট হইয়া যায়। সাগরগামী গঙ্গাদি সকল নদীসমূহের মধ্যে কি কি বিনষ্ট হয় আর কোন কোন বস্তু বিদ্যমান থাকে ? কালক্ষয়ের পর আপনি কেমন করিয়া জীবিত থাকেন, আমার প্রতি সহৃদয় হইয়া সকল কিছু কীর্তণ করুণ।"


মার্কন্ডেয় মুনি বলেছিলেন — "হে  ধর্ম রাজ  যুধিষ্টির! তুমি মহাপ্রাঞ্জ। তবে এক্ষণে আমি যাহা বলিব তাহা বহুকাল যাবৎ রূদ্রতপস্যান্তে আমি স্বয়ং শঙ্কর হইতেই লব্ধ হইয়াছি। আমি যাহা বলিতেছি , এই পুরাণ শ্রবণ করিলে সুরাপায়ী, চৌর্যবৃত্তিপরায়ণ ও গোঘাতী মনুষ্য নিখিলমধ্যে কলুষমুক্ত হয়। হে নৃপসত্তম ! নদীনিবহ মধ্যে সরস্বতী , গঙ্গা , কাবেরী , দেবিকা , সিন্ধু , সালকুটী , সরযু , শতরূদ্রা , মহী , চর্ম্মিলা , গোদাবরী , যমুনা , পয়োষ্ণী , শতদ্রু — এই সকল নদীই শেষ্ঠা ও সর্ব্বপাপহরা কিন্তু কল্পক্ষয় কালে সমুদ্র ও নদীনিচয় সম্পূর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। একমাত্র ত্রিলোক বিখ্যাতা নর্মদা বিস্ময়কর এক মাহাত্ম্য লইয়া প্রতি কল্পে কল্পে নিরন্তর বিদ্যমান থাকে। "

                ধর্মরাজ বলেছিলেন— হে মহামুনে ! আপনি ব্যাতীত এই পৃথিবীতে অন্য কেহই কল্পক্ষয়কাল দর্শন করেন নাই। আপনি সহস্রচরণ সহস্রনয়ণ সহস্রউদর মধুরিপু পদ্মনাভকে একার্ণবে শয়ানে দর্শন করিয়াছেন। চরাচর জগত দাহ্যমান হইলেও তাঁহার অনুগ্রহে আপনিই একমাত্র প্রতি কল্পে কল্পে জীবিত থাকেন। সেই ক্ষয়কালে আপনি কি কি দর্শন করেন তাহা দয়া করিয়া আমাদের কাছে বর্ণনা করুণ।"     

মার্কন্ডেয় বলেছিলেন — "পুরাকালে ভগবান শঙ্কর বায়ুর নিকট এই মহাপুরাণ বর্ণনা করেন , স্কন্দ বায়ু সকাশে ইহা শ্রবণ করেন , স্কন্দ সমীপে বশিষ্ট ইহা বিদিত হন , বশিষ্ট হইতে পরাশর ও পরাশর হইতে জাতুকর্ণ ও পরিশেষে জাতুকর্ণ হইতে অন্য সকলে শ্রবণ ও কীর্ত্তণ করেন। তাহাই আমিও করিতেছি। 

        ★★★     স্বয়ং বিষ্ণুর প্রাসাদে সত্যই আমি বারংবার সপ্তকল্পের ভীষন ক্ষনকাল দর্শন করিয়াছি।★★★★

 যুগাবসানে ভীষন মহাকল্পক্ষয়কাল উপস্থিত হইল , তাহার শতাধিক বৎসর পূর্ব হইতেই ভয়ঙ্কর অনাবৃষ্টি , ওষধি সমূহ রসহীন , ত্রিলোক দেবদানব বিবর্জিত ! সরিৎ=(নদী) , সরোবর ও তড়াগে=(বর ও

গভীর পুকুরে) জল নাই । বন ও উপবন শুষ্ক হইয়া গেল , ত্রিলোক সর্ব্বশুন্য হইয়া নিরাকার ধারন করে। 

ইহার পর পরই ক্ষয়কাল উপস্থিত হইল ও দ্বাদশ আদিত্য উদিত হয়েও সমগ্র জগতকে দগ্ধ করিয়া ধরামন্ডলকে এক বৃহৎ একার্ণবে=(অর্ণব=সমুদ্র,সাগর) পরিণত করিল। 

                আমি বাহুদ্বারা সেই একার্ণবে সন্তরণ করিতে লাগিলাম। 

              সেই সলিলমধ্যে হঠাৎই আদিত্যরূপী দশদিক আলোকজ্জলে উদ্ভাসিত অনাদিনিধান★ পরম প্রভূকে দর্শন করিলাম। 

(অনাদি=আদিহীন,কারণহীন,উৎপত্তিহীন)

(নিধান=আধার, ভান্ডার,)

             আমার সহিত অন্য একটি মনু দৃষ্টিগোচর হইলেন যিনি চক্ররূঢ়ের ন্যায় তমোময় সেই জলধিমধ্যে অবিরাম সন্তরণ  করিতে লাগিলেন। আমিও সন্তরণপূর্ব্বক তথায় উপস্থিত হইয়া এক মহা উন্মত্ত মৎস দর্শন করিলাম।  

             সেই মহা উন্মত্ত মৎসরূপী পরম মহেশ্বর আমাকে বলিলেন — “ এস, আমার নিকট আগমন কর।” আমি কোনক্রমে তাঁহার মুখ গহ্বরে গমনপূর্ব্বক নির্ব্বোধ★ প্রাপ্ত হইলাম। 

(নির্বোধ=চেতনাহীন,অজ্ঞান,বুদ্ধিহীন)

              একার্ণবে আমি এক আবর্তসঙ্কুলা তরঙ্গায়িত শুভ্র ফেনারাশি বুকে নিয়ে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ মৎসসমূহ সমকলা এক কামগামিনী★ পূণ্যানদী সন্দর্শন করিলাম।  

             সেই নদীমধ্যে এক নীলোৎপল দলের ন্যায় শ্যাম দিব্য হাটকাদিতে

(হাটক=সোনা)

ভূষিত হইয়া মনোহারীনি রমনীকে সত্য সত্যই কনোকজ্জল★(কনক=সোনা) বলিয়া প্রতিয়মান হইল।

              ঐ রমনী এক বৃহৎ পোতে (পোত=নৌকা, জাহাজ)অবস্থিত। মনু তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল — 

              হে মনোহরাঙ্গি★(অতি সুন্দর অঙ্গ বিশেষ) ! তুমি কে ! কি পরিচয় তোমার ? সুর , অসুর , সরিৎ , সাগর , শৈল — সকল কিছুই বিনষ্ট হইয়াছে । তথাপি তুমি একাকিনী অবলীলাক্রমে এই তমসাকৃত একার্ণবে ভ্রমন করিতেছ ?


=======================